স্বদেশ ডেস্ক:
বিশ্বের এক নম্বর আফিম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে এতদিন কিছুটা বদনামই ছিল আফগানিস্তানের। তবে সেই তকমা এখন মিয়ানমারের দখলে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ এক রিপোর্টে জানিয়েছে, আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলে মিয়ানমার এখন বিশ্বের বৃহত্তম আফিম উৎপাদনকারী দেশ। খবর বিবিসির।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর মিয়ানমারের আফিম উৎপাদন ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। এতে অনুমান করা হচ্ছে, সামরিক জান্তাশাসিত দেশটিতে এবার ১০৮০ টন আফিম উৎপাদন হবে। অন্যদিকে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে এবার আফিম উৎপাদিত হতে পারে ৩৩০ টন। তুলনামূলক চিত্রে দেখা যাচ্ছে, আফগানিস্তানের চেয়ে মিয়ানমারে পপি চাষ হচ্ছে তিনগুণেরও বেশি।
আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর মাদক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে দেশটিতে পপি চাষ আগের বছরের চেয়ে ৯৫ শতাংশই কমে গেছে।
একদিনে আফগানিস্তানে পপি চাষ প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে, অন্যদিকে ব্যাপক আকারে চাষ বেড়েছে মিয়ানমারে। আর এটি সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধীদের আয়ের একটি লাভজনক উৎসে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম দপ্তরের (ইউএনওডিসি) আঞ্চলিক প্রতিনিধি জেরেমি ডগলাস বলেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকে অব্যাহত আন্দোলন-সংঘাত দেশটির অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং শাসনব্যবস্থায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। আর এই পরিস্থিতি প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের জীবিকা নির্বাহের জন্য আফিমের দিকে ধাবিত করেছে।
মিয়ানমারে যদিও কয়েক দশক ধরে আফিমের চাষ হচ্ছে, তবে সামরিক অভ্যুত্থানের পর এর চাষাবাদ অন্তত ১৮ শতাংশ বেড়েছে। আফিম চাষাবাদের অর্থের একটি বড় অংশই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী দলগুলোকে অর্থায়ন করছে।
মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে শান রাজ্যে একজোট হওয়া তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। আর সেই শান রাজ্যই দেশটির শীর্ষ আফিম উৎপাদনকারী অঞ্চল।
খুব সচেতনভাবেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো নিজেদের কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য আফিম বিক্রির ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলে বিভিন্ন কারণে যারা বেকার, তাদের অনেকেই যুক্ত হয়েছেন আফিম চাষ সংশ্লিষ্ট কাজে।
জাতিসংঘের রিপোর্টে আরও বলা হয়, আফিম চাষ শান রাজ্যে সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত হয়েছে, তারপর চিন ও কাচিন রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে চাষাবাদ।
আফিম হচ্ছে ভয়ানক মাদক হেরোইনের মূল উপাদান। জাতিসংঘের অনুমান, চলতি বছর মিয়ানমার থেকে ১৫৪ টন হেরোইন রপ্তানি হয়েছে, যার মূল্য ২২০ কোটি ডলার।